সাগর কন্যা কুয়াকাটা

সাগর কন্যা কুয়াকাটা

kuakata

একই জায়গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য পৃথিবীর কটি জায়গায় আছে! সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়া আর জেলেদের জালে তাজা মাছের লম্ফঝম্পের দৃশ্য আর কোথায় দেখা যায়! পাশেই সোনারচরের হরিণ পালের হাতছানি আর রূপারচরের রূপ সৌন্দর্য।

কোথায় কোথায় ঘুরবেন????
কুয়াকাটাকে ঘিরে সৌন্দর্যের শেষ নেই। যেখানে ঘুরার জায়গার কোন অভাব নাই আছে
সোনারচর-রূপারচর ,ক্র্যাবল্যান্ড ,ফাতরারচর ,রাখাইন পল্লী,ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান ।
এই গুলাতে ঘুরে আপনি অনেক মনের শান্তি পাবেন আপনার প্রান জুরিয়ে যাবে ।

সোনারচর-রূপারচর নামই বলে দেয়, প্রকৃতি কতটা সৌন্দর্য বিলিয়েছে এখানে। রূপালি বালির ওপর ওখানে সারাক্ষণ ছুটছে লাল কাঁকড়া। বিশাল বনাঞ্চলে সুন্দরবনের আমেজ।দেখা মেলে বানর, বুনো মহিষ, মেছোকুমির, মেছোবাঘ, বুনোগরু, মোরগসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির। কুয়াকাটা থেকে ট্রলারযোগে প্রায় তিন ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় এখানে।

2526979955_4eb092ddd3_b

ফাতরারচর শাল আছে, সেগুন, কেওড়া, গজারি, সুন্দরীসহ নানা বনবৃক্ষ। একই সঙ্গে দেখা মেলে হরিণ, বানরসহ নানা প্রাণীর। গাছ থেকে মধু আহরণ করছে বাওয়ালি।

রাখাইন পল্লী যেখানে আছে রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় দুইশত বছরের পুরানো ঐতিহ্য রয়েছে। “গৌতম বুদ্ধের” বিশাল আকৃতির মূর্তি দেখতে পারেন। দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটির অবস্থান কুয়াকাটা থেকে ১0 কিলোমিটার দূরে রাখাইন পল্লীতে। গৌতম বুদ্ধের এই ধ্যানমগ্ন মূর্তিটি ৩৬ ফুট উঁচু এবং এর ওজনসাড়ে ৩৭ মন।

buddhist-temple-optimized

সমুদ্র সৈকতের একেবারে কোল ঘেঁষে প্রায় ২00 একর জায়গায় ষাটের দশকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নারিকেল কুঞ্জ, ঝাউবন, গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন , পশ্চিমদিকের ফাতরার বন ও মহিপুরের রেঞ্জের বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান ।

দর্শণার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই সৈকতে আছে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল ও ঘোড়া। ভাড়া সাধারণত দূরত্ব ও সময় অনুযায়ী হয়। কুয়াকাটার আশে পাশের বেশ কয়েকটি চর আছে। সেগুলি দেখতে আপনি যেতে পারেন স্পিডবোট ও ট্রলার কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকায় করে। কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। সেগুলিতে রান্না করার সকল ব্যবস্থা আছে। চুলা, খড়ি, হাড়ি, পাতিল থেকে বাবুর্চি পর্যন্ত। মুদ্র উপকূলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য রয়েছে- সমুদ্র ভ্রমণকারী জাহাজ ও ট্রলার এবং স্পিড বোট। এসব জাহাজ ও ট্রলারে উঠে পর্যটকরা সুন্দরবনের অংশ বিশেষ ফাতরার চর, সোনার চর, কটকা, হাঁসার চর, গঙ্গামতির লেক ও সুন্দরবনসহ গভীর সমুদ্রে বিচরণ করে অফুরস্ত আত্মতৃপ্তিতে নিজেদের ভরে তোলে। সমুদ্র ভ্রমণকারী জাহাযে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
কুয়াকাটায় সীমিত সংখ্যক দোকান আছে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ও সৌখিন জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারবেন সেসব দোকান থেকে। দাম অপেক্ষাকৃত একটু বেশি হলেও অনেক নতুন নতুন আইটেম পাবেন। কুয়াকাটায় দেখার আরেক আকর্ষণ শুঁটকিপল্লি। কুয়াটায় শুটকি পল্লী থাকায় এখানে অনেক কম দামে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের শুটকি পাবেন। ইলিশ, রূপচাঁদা, হাঙর, লইট্যা, শাপলাপাতাসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিশাল এলাকায় চ্যাঙ বানিয়ে শুঁটকি তৈরির পদ্ধতি দেখা আরেক মজার অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮0 কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১0৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি বিআরটিসি, দ্রুতি পরিবহন, সাকুরা পরিবহনসহ একাধিক পরিবহনের গাড়ীতে গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটায় আসতে পারবেন। এছাড়া যে কোন স্থান থেকে রেন্ট-এ-কার যোগেও আসতে পারেন। আপনি বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২00 মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা। ভাড়া ৫00-৫৫0 টাকা।
ঢাকা থেকে নৌ পথে কুয়াকাটায় আসতে চান, তারা ২ টি ফেরীর দূর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন। ঢাকা সদরঘাট থেকে বিলাসবহুল ডাবল ডেকার এম.ভি পারাবত, এম.ভি সৈকত, এম.ভি সুন্দরবন, এম.ভি সম্পদ, এম.ভি প্রিন্স অব বরিশাল, এম.ভি পাতারহাট, এম.ভি উপকূল লঞ্চের কেবীনে উঠে সকালের মধ্যে পটুয়াখালী কিংবা কলাপাড়া নেমে রেন্ট-এ-কার যোগে এবং পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটের বাসে চড়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা থেকে উল্লেখিত রুটসমূহের লঞ্চগুলো বিকাল ৫ থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করে থাকে। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৬00 টাকা। কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটার ২২ কি.মি. রাস্তার চরম বেহাল দশা আর ৩টি ফেরীর ঝামেলায় এক ঘন্টার রাস্তা যেতে ৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়।

থাকার ব্যবস্থাঃ

kuakata-grand-hotel-sea
কুয়াকাটায় আবাসন সংকট অবশ্য একটি অন্যতম সমস্যা।এর মধ্যে আধুনিক মান সম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে- হোটেল নীলঞ্জনা, হোটেল বি-ভিউ, হোটেল গোল্ডেন প্যারেজ, হোটেল বীচ-ভেলী, হোটেল ফ্যামিলী হোমস, কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজ, হোটেল সাগর কন্যা, হোটেল আল হেরা, হোটেল আকন, হোটেল সি-গার্ডেন, হোটেল স্মৃতি সহ আরো একাধিক হোটেল ও মোটেল।
নীচের কিছু মানসম্পন্ন হোটেলের ঠিকানা ও ভাড়া দেয়া হলো। আশা করি সবার কাজে লাগবে।
১. হলিডে হোমস (পর্যটন করপোরেশন)
কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭১৫-00১১৪৮৩
ভাড়া :
নন এসি টুইন : ১১00/-
ইকোনমি : ৮00/-

২. ইয়োথ ইন (পর্যটন করপোরেশন)
কুয়াকাটা
ফোন : 0৪৪২৮-৫৬২০৭
নন এসি টুইন : ১৫00/-
এসি টুইন : ২৫00/-

৩. হোটেল স্কাই প‌্যালেস,
পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭২৭-৫0৭৪৭৯
ভাড়া :
নন এসি কাপল : ১২00/-
নন এসি টুইন : ১৪00/-

৩. হোটেল বনানী প‌্যালেস,
পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭১-৩৬৭৪১৯২
ভাড়া :
নন এসি টুইন/কাপল : ১২৫0/- (নীচতলা), ১৬৫0/- (উপরের তলা)
ডরমেটরী : ৪000/- (৮ বেড)

৪. হোটেল নীলাঞ্জনা
রাখাইন মার্কেট, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭১২-৯২৭৯0৪
ভাড়া :
নন এসি সিঙ্গেল : ৮৫0/-
নন এসি টুইন : ১৪৫0/-

৫. বিশ্বাস সি প‌্যালেস হোটেল
বেড়ি বাধ, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭৩-00৯৩৩৫৬
ভাড়া :
নন এসি টুইন : ১৮00/-
৩ বেডেড রুম : ২000/-

৬. সাগর কণ্যা রিসোর্ট লি:
পশ্চিম কুয়াকাটা, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭১১-১৮১৭৯৮
ভাড়া :
নন এসি কাপল : ১২00/- (নীচতলা), ১৫00/- (উপরের তলা)
নন এস টুইন : ১৮00/-

৭. হোটেল কুয়াকাটা ইন
সদর রোড, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭৫-000৮১৭৭
ভাড়া :
ইকোনমি টুইন/কাপল : ১৫00/-
ইকোনমি ফ্যামিলি রুম : ১৮৫0/- (১ ডাবল, ১ সিঙ্গেল)

৮. কিংস হোটেল,
সাগর পাড়, কুয়াকাটা
ফোন : 0১৭১৩-২৭৭৬৩0
ভাড়া :
ইকোনমি ডাবল : ৬00/-
নন এসি ডিলাক্স : ৮00/-
ভাড়ার ব্যাপারে একটা কথা কুয়াকাটাতে বছরভর ৪0-৫0% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। তাই অবশ্যই হোটেল নেবার সময় একটু দর-কষাকষি করবেন।

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

On Key

Related Posts

সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি

মেঘের রাজ্য-‘সাজেক ভ্যালি’ ঘুরে আসুন বন্ধ-স্বজন-পরিজন নিয়ে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ‘সাজেক ভ্যালি’। Sajek ValleyThe Kingdom of Clouds ভিডিও কৃতজ্ঞতাঃSaim Bin MujibProducer, Daily StarDiscover Bangladesh

পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

কক্সবাজার, বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, অরণ্য রঙিন শঙ্খ শেল, রামুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার এবং ম্যাজেস্টিক সাগর সাইড রেস্টুরেন্ট এ টাটকা সি ফুড

মহাস্থানগড় ও তার ইতিহাস

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষনা

সাগর কন্যা কুয়াকাটা

সাগর কন্যা কুয়াকাটা একই জায়গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য পৃথিবীর কটি জায়গায় আছে! সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়া আর জেলেদের জালে তাজা মাছের লম্ফঝম্পের দৃশ্য

Scroll to Top